হরপ্পা সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো | Characteristics of Indus valley civilization
আজকের
আলোচনার বিষয় হল সিন্ধু সভ্যতার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ নিয়ে ,
সিন্ধু সভ্যতার লোকদের সামাজিক , রাজনৈতিক , ধর্মীয় , অর্থনৈতিক গুনাগুন
কেমন ছিল তা নিয়ে আজকের আলোচনা , আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে আজকের আলোচনা ।
প্রাচীনত্ব
বিস্তার
প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতা
তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা
নদীমাতৃক সভ্যতা
নগর পরিকল্পনা
রাজনৈতিক ব্যবস্থা
সামাজিক অবস্থা
অর্থনৈতিক অবস্থা
আধুনিকতা
হরপ্পা
সভ্যতা বা সিন্ধু সভ্যতা হল ভারতের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা।এই
সভ্যতা আবিষ্কারের পূর্বে মনে করা হতো যে ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির সূচনা
অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের। কিন্তু হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কার ভারতের ইতিহাস ও
সংস্কৃতির দিগন্তকে প্রসারিত করে তার প্রাচীনত্ব ও মৌলিকত্বকে প্রতিষ্ঠিত
করেছে।এই সভ্যতার উন্নত রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, পয়ঃপ্রণালী, স্নানাগার,
শস্যাগার, উন্নত স্বাস্থ্য সচেতনতা ইত্যাদি ভারত তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক
স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের নজির স্থাপন করেছে। নিম্নে এই সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি
আলোচনা করা হলো-
১)প্রাচীনত্ব-হরপ্পা
সভ্যতার প্রাচীনত্ব তথা সূচনাকাল ও অবলুপ্তিকাল নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে
মতভেদ আছে। ঐতিহাসিক মার্টিমার হুইলার 2500 খ্রিস্টপূর্বাব্দকে হরপ্পা
সভ্যতার সূচনাকাল এবং 1500 খ্রিষ্টপূর্বাব্দকে হরপ্পা সভ্যতার অবলুপ্তিকাল
বলে চিহ্নিত করেছেন। ঐতিহাসিক স্যার জন মার্শাল মনে করেন হরপ্পা সভ্যতার
বিকাশ ঘটেছিল 3200 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 2750 খ্রিষ্টপূর্বাব্দের
মধ্যবর্তী সময়ে। বর্তমানে রেডিও কার্বন ডেটিং পদ্ধতির দ্বারা হরপ্পা
সভ্যতার বিকাশকাল 2300 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 1750 খ্রিষ্টপূর্বাব্দ
নির্ণয় করা হয়েছে।
২)বিস্তার-পৃথিবীর
প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে সর্ববৃহৎ হরপ্পা সভ্যতার আয়তন ছিল প্রায় 12
লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।এই সভ্যতা পশ্চিমে ইরাণ সীমান্তে অবস্থিত
পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের সুতকাজেনদোর থেকে পূর্বে ভারতের
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আলমগীরপুর এবং উত্তরে জম্মুর নিকটবর্তী মান্ডা থেকে
দক্ষিনে গোদাবরী নদীর তীরবর্তী মহারাষ্ট্রের দাইমাবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
আজ পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অন্তত 1500টি কেন্দ্রে
এই সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।
৩)প্রাগৈতিহাসিক যুগের সভ্যতা-হরপ্পা
সভ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল-এই সভ্যতা ছিল প্রাগৈতিহাসিক
যুগের সভ্যতা। কারণ হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত মৃৎপাত্র,
সিলমোহর প্রভৃতির গায়ে লিপি খোদাই করা থাকলেও সেই লিপির পাঠোদ্ধার করা
আজও সম্ভব হয়নি। লিখিত উপাদান সমূহের পাঠোদ্ধার করতে না পারার কারণে এই
সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন হাতিয়ার, মৃৎপাত্র, মূর্তি,
রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে ঐতিহাসিকদের ইতিহাস রচনা করতে
হয়।
৪)তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা-হরপ্পা
সভ্যতার অধিবাসীরা লোহার ব্যবহার জানত না। তারা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়
জিনিসপত্র, হাতিয়ার, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি তৈরীর জন্য পাথর ও তামা ব্যবহার
করত। এই কারণে হরপ্পা সভ্যতাকে তাম্র প্রস্তর যুগের সভ্যতা বলা হয়। অবশ্য
পরবর্তীকালে হরপ্পা সভ্যতার অধিবাসীরা তামার সঙ্গে টিন মিশিয়ে ব্রোঞ্জের
ব্যবহার শিখেছিল।
৫)নদীমাতৃক সভ্যতা-পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাগুলির মত হরপ্পা সভ্যতাও ছিল নদীমাতৃক সভ্যতা।
প্রধানত সিন্ধু নদ এবং তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে এই
সভ্যতার প্রসার ঘটেছিল। যেমন-সিন্ধু নদের তীরে মহেঞ্জোদারো, ইরাবতী বা রাভী
নদীর তীরে হরপ্পা, ঘর্ঘরা নদীর তীরে কালিবঙ্গান, নদীর তীরে রুপার, ভোগাবর
নদীর তীরে লোথাল ইত্যাদি হরপ্পা সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলি বিকাশ
লাভ করেছিল।
৬)নগর পরিকল্পনা-হরপ্পা
সভ্যতার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এর নগর পরিকল্পনা। এই
সভ্যতার প্রধান দুটি নগরী-হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোয় এই নগর পরিকল্পনার
সুস্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখানে সুবিন্যাস্ত রাস্তাঘাট, বাঁধানো
ফুটপাত, রাস্তার পাশে ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী, রাস্তার দু'পাশে আলোর
ব্যবস্থা, ডাস্টবিনের অবস্থান ও তা নিয়মিত পরিষ্কারের সুবন্দোবস্ত,
পরিকল্পিত ঘরবাড়ি, স্নানাগার, শস্যাগার প্রভৃতি নাগরিক জীবনের সুযোগ
সুবিধাগুলি এই সভ্যতার উন্নত নগর পরিকল্পনার সাক্ষ্য বহন করে। অনুমান করা
হয় যে এই সব ব্যবস্থা তত্ত্বাবধানের জন্য কোন পৌর প্রতিষ্ঠান ছিল।
৭)রাজনৈতিক ব্যবস্থা-হরপ্পা
সভ্যতার অধিবাসীরা রাজনীতি সচেতন ছিল বলে মনে করা হয়।তবে এই সভ্যতায় ঠিক
কী ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সে বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে
মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ঐতিহাসিক এইচ.ভি.শাঙ্খালিয়ার মতে, হরপ্পা
সভ্যতায় উদার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। ঐতিহাসিক
মার্টিমার হুইলার হরপ্পা সভ্যতায় পুরোহিত রাজার শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল বলে
অভিমত প্রকাশ করেছেন। পুরোহিত রাজা দৈব অধিকার ঘোষণা করে তাঁর স্বৈরাচারী
শাসন চালু রেখেছিলেন। খননকার্যের ফলে মহেঞ্জোদারোয় প্রাপ্ত মাথায় ফেট্টি
বাঁধা ও মুখমন্ডল দাড়িতে আবৃত একটি পুরুষ মূর্তিকে পুরোহিত রাজার প্রতীক
বলে উপস্থাপন করা হয়। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন হরপ্পা সভ্যতার
নগরগুলিতে গিল্ড বা বণিক সংঘ দ্বারা পরিচালিত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল।
৮)সামাজিক অবস্থা-হরপ্পা
সভ্যতার বিভিন্ন কেন্দ্রে খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত গৃহস্থালির দ্রব্যাদি,
পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্য, অবসর বিনোদনের উপাদান, লিপি, সিলমোহর প্রভৃতি থেকে
এই সভ্যতার সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। এই সভ্যতায় সমাজ
ব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। মাতৃতান্ত্রিক হলেও এই সভ্যতায় সমাজে
শ্রেণিবৈষম্য ছিল। সমাজে সম্ভবত তিন শ্রেণীর মানুষ বসবাস করত-প্রথম
শ্রেণীতে ছিলেন পুরোহিতরা বা উচ্চবিত্ত, দ্বিতীয় শ্রেণীতে ছিলেন ধনী,
বণিক, বুর্জোয়া, কারিগর ও যোদ্ধারা বা মধ্যবিত্ত এবং তৃতীয় শ্রেণীতে
ছিলেন দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকেরা।এই সভ্যতার নগরগুলির পশ্চিম
দিকের প্রাচীর ঘেরা উঁচু দুর্গ অঞ্চলে উচ্চবিত্ত শাসক শ্রেণীর লোকজন বা
পুরোহিতরা বসবাস করতেন। আর পূর্বদিকের নিচু অঞ্চলে বসবাস করতেন সাধারণ
নাগরিকগণ।
৯)অর্থনৈতিক অবস্থা-হরপ্পা
সভ্যতার অধিবাসীরা কৃষি, পশুপালন, ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প ইত্যাদি বিভিন্ন
ধরনের অর্থনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান
জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। গম, যব, তুলো, তিল ইত্যাদি ছিল তাদের প্রধান কৃষিজ
ফসল। এছাড়া লোথাল ও রংপুরে ধান চাষেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই সভ্যতার
লোকেরা হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ইত্যাদি পশুপাখি পালন করত। তবে
তারা ঘোড়াকে পোষ মানাতে পারেনি। কৃষি ও পশুপালন ছাড়াও হরপ্পা সভ্যতার
অধিবাসীরা ব্যবসা-বাণিজ্যকেও জীবিকা হিসাবে বেছে নিয়েছিল।এই
ব্যবসা-বাণিজ্যে নিযুক্ত বণিকদের পণি বলা হত। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ
বাণিজ্যই নয়, মেসোপটেমিয়া, মিশর, বালুচিস্তান, আফগানিস্তান, পারস্য
ইত্যাদি দেশের সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও চালাত।ব্যবসা বাণিজ্য
চালানোর জন্য এখানকার বণিকরা সিলমোহর ব্যবহার করত। ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম
ছিল বিনিময় প্রথা।
১০)আধুনিকতা-আজ
থেকে অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরানো হলেও হরপ্পা সভ্যতায় অনেক আধুনিক
বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব ছিল। এই সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র চানহুদারোতে
খনন কার্য চালিয়ে প্রাপ্ত তথ্য থেকে ঐতিহাসিকরা অনুমান করেন যে এই সভ্যতার
মহিলারা আধুনিক যুগের মহিলাদের মত লিপস্টিক, নেলপালিশ, ভ্যানিটি ব্যাগ
ইত্যাদি ব্যবহার করত। এই সভ্যতায় প্রাপ্ত অর্ধনগ্ন নারী মূর্তিগুলির
শৈল্পিক দেহভঙ্গিমা থেকে অনুমান করা হয় যে সেখানে নৃত্য-গীতেরও প্রচলন
ছিল। পয়ঃপ্রণালী, ডাস্টবিন, শৌচাগার, ম্যানহোল ইত্যাদির অস্তিত্ব
স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়ে এই সভ্যতার মানুষদের আধুনিক মানসিকতার পরিচয়
দেয়। শুধু তাই নয়, খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত থালা, বাটি, খেলনা, আয়না,
চিরুনি, খাট, চেয়ার, মাদুর ইত্যাদিও এই সভ্যতার আধুনিকতার সাক্ষ্য বহন
করে।
Many
people search as these keywords like that সিন্ধু সভ্যতা,সিন্ধু নদের
সভ্যতা,সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস রহস্য,প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতা,মিশরীয় ও সিন্ধু
সভ্যতা,হরপ্পা সভ্যতা,হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা,মেহেড়গড় সভ্যতা,প্রাচীনতম আধুনিক
সভ্যতা,বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর,বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা
এসাইনমেন্ট উত্তর মিশরীয় ও সিন্ধু সভ্যতা,মেসোপটেমিয়া সভ্যতা,বাংলাদেশের
সমাজ ও সভ্যতা,সামাজিক ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা,অনার্স সাজেশন সামাজিক ইতিহাস
ও বিশ্ব সভ্যতা,বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা এসাইনমেন্টের উত্তর,
indus valley civilization,indus valley,indus valley civilization
facts,indus valley civilization upsc,indus valley civilization in
hindi,indus valley civilization documentary,history of the indus valley
civilization,what is indus valley civilization,what is the indus valley
civilization,what is the indus valley civilization known
for,characteristics of indus velley civilization,indus valley
civilization crash course,indus valley civilization religion
0 মন্তব্যসমূহ