আল্লাহতায়ালা মানুষকে কেন সৃষ্টি করলেন ? মানুষ সৃষ্টির রহস্য কি ? মানুষ সৃষ্টির গুরুত্ব কি ?
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, তাঁর নাম ও গুণাবলির মাধ্যমে তাঁকে চেনার জন্য এবং তিনি তাঁকে সে নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি তাঁর প্রতি আনুগত্যশীল হবে এবং নির্দেশ পালন করবে সে সফলকাম। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিবে সে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদেরকে এমনস্থানে সম্মিলিত করা অনিবার্য যেখানে তিনি তাদেরকে তার আদেশ-নিষেধ পালনের ভিত্তিতে প্রতিদান দিতে পারবেন। এ কারণে মুশরিকদের প্রতিদানকে অস্বীকার করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!"[সূরা হুদ, আয়াত: ০৭]
এক:
আল্লাহ তাআলা “হিকমত” বা প্রজ্ঞার গুণে গুণান্বিত। তাঁর মহান নামের মধ্যে রয়েছে- “আল-হাকিম” বা প্রজ্ঞাবান। জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ তাআলা কোন কিছু অনর্থক সৃষ্টি করেননি। বরং তিনি অনর্থক কোন কিছু করা থেকে পবিত্র। বরং তিনি মহান হিকমত ও সার্বিক কল্যাণের ভিত্তিতে সৃষ্টি করে থাকেন। এ হেকমত কেউ জানে; কেউ জানে না। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। তিনি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি মানুষকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আসমান ও জমিন অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা কি মনে কর আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি। তোমরা আমার নিকট প্রর্ত্যাবর্তন করবে না। সত্যিকার বাদশা আল্লাহ মহান হোন। তিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই; যিনি মহান আরশের অধিপতি।”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ১১৫, ১১৬] আল্লাহ তাআলা বলেন: “আসমান-জমিন এবং এ দুইটির মাঝে যা কিছু আছে সে সব আমি তামাশা করে সৃষ্টি করিনি।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১৬] আল্লাহ আরও বলেন: “আমি আসমান-জমিন আর এ দুটির মাঝে যা আছে সে সব তামাশা করে সৃষ্টি করিনি। আমি ও দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।”[সূরা দুখান, আয়াত: ৩৮, ৩৯] তিনি আরও বলেন: “হা-মীম। এই কিতাব পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। নভোমন্ডল, ভূ-মন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু আমি যথাযথভাবেই এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেই সৃষ্টি করেছি। কাফেরদেরকে যে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।”[সূরা আহকাফ, আয়াত: ১-৩]
দুই:
চতুষ্পদ জন্তুর মত শুধু পানাহার ও বংশবৃদ্ধির জন্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। অনেক সৃষ্টির উপর আল্লাহ মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কুফরিকে গ্রহণ করে নিয়েছে এবং যে মহান উদ্দেশ্যে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে সেটাকে তারা বেমালুম ভুলে গেছে বা অস্বীকার করেছে। তাদের চরম উদ্দেশ্য হচ্ছে- দুনিয়াকে উপভোগ করা। এদের জীবন চতুষ্পদ জন্তুর জীবনের মত। বরং তারা চতুষ্পদ জন্তুর চেয়ে অধম। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা কুফরি করে তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে আর আহার করে যেভাবে আহার করে চতুষ্পদ জন্তু জানোয়াররা।”[সূরা মুহাম্মদ, আয়াত: ১২] তিনি আরও বলেন, “ছেড়ে দাও ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যে) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শীঘ্রই ওরা (ওদের আমলের পরিণতি) জানতে পারবে।”।[সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৩] তিনি আরও বলেন: “আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে দোযখের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের অন্তর আছে কিন্তুতা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তুতা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে কিন্তুতা দিয়ে শোনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তার চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারা একেবারে বে-খবর।”[সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৭৯] বিবেকবান সবাই জানে যে, যে ব্যক্তি কোন কিছু তৈরী করেন তিনি এর হেকমত সম্পর্কে অন্যের তুলনায় ভাল জানেন। আর আল্লাহর জন্য উত্তম উদাহরণ প্রযোজ্য, যেহেতু তিনিই মানুষ সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ সৃষ্টির হেকমত সম্পর্কে তিনিই ভাল জানবেন। দুনিয়াবি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটা যে সঠিক এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। মানুষ নিশ্চিত যে, তার বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিশেষ একটা হেকমত বা উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। চক্ষু সৃষ্টি করা হয়েছে দেখার জন্য। কান সৃষ্টি করা হয়েছে শুনার জন্য। এভাবে প্রত্যেকটি অঙ্গ। এটি কি যুক্তিসঙ্গত যে, মানুষের প্রত্যেকটি অঙ্গ বিশেষ একটা উদ্দেশ্যেসৃষ্টি করা হয়েছে আর মানব সত্ত্বাকে অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে?! অথবা যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি যখন তাকে সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন তখন সে সেটা গ্রহণ করতে নারাজ?!
তিন:
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি আসমান-জমিন, জীবন-মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য। মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য- কে তাঁর আনুগত্য করে যাতে তাকে পুরস্কৃত করতে পারেন; আর কে তাঁর অবাধ্য হয় যাতে তাকে শাস্তি দিতে পারেন। তিনি বলেন: “যিনি করেছেন মরণ ও জীবন যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন- আমলের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম? তিনি মহা শক্তিধর, অতি ক্ষমাশীল।”[সূরা আল-মুল্ক, আয়াত: ২]
এ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রভাব ফুটে উঠে। যেমন-‘আল-রহমান’, ‘আল-গফুর’, ‘আল-হাকিম’, ‘আল-তাওয়াব’, ‘আল-রহীম’ ইত্যাদি আল্লাহর গুণবাচক নাম।
সবচেয়ে যে মহান উদ্দেশ্য ও মহা পরীক্ষার জন্য মানুষ সৃষ্টি করা হয়েছে সেটা হচ্ছে- তাওহীদ বা নিরংকুশভাবে এক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ প্রদান করা। আল্লাহ নিজেই মানুষ সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন: “আমি জিন্ন ও মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদাত করবে।”[সূরা যারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
islamic question answers in bangla,
islamic prosno uttor in Bengali
Islamic juggasa
0 মন্তব্যসমূহ